উচ্চ আদালতে মামলা করার বিভিন্ন তথ্য।



বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্টই হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। সু্প্রীম কোর্টের দু’টি বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগ। এই হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগ দু’টো একই এলাকায় অবস্থিত। মানুষের মুখে মুখে যা হাইকোর্ট নামে পরিচিত।
মামলা

উচ্চ আদালতে বিভিন্নভাবে মামলা হতে পারে। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষ… হওয়ার পর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল হতে পারে, মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে আসতে পারে, আবার নিম্ন আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কোন নির্দিষ্ট মামলার ব্যাপারে নিম্ন আদালতকে নির্দেশনা দেয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মামলাটিকে উচ্চ আদালতে নিয়ে আসে।

কিছু কিছু মামলা আছে যেগুলোতে সরাসরি হাইকোর্টে যেতে হয়, যেমন: রিট, কোম্পানী সংক্রান্ত মামলা, খ্রিস্টান বিবাহ সংক্রান্ত মামলা, এডমিরালটি বা সমুদ্রগামী জাহাজ সংক্রান্ত মামলা।

রিট
সংবিধানের ১০২ ধারা অনুসারে যেকোন নাগরিক রিট আবেদন করতে পারেন। রিটের বিষয়টি মামলার মত হলেও মৌলিক একটি পার্থক্য আছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন আইনের অধীনে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করতে পারে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়।

আবার কেউ যদি মনে করে সরকারের প্রণীত কোন আইন প্রচলিত অন্য আইনের পরিপন্থী বা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সে ক্ষেত্রেও আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করা যায়।

অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে রিট এবং সাধারণ মামলা দু’টিই করা চলে। রিটে খরচ কিছুটা বেশি হলেও সাধারণত দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।

এডমিনিস্ট্রেটিভ আপিলেট ট্রাইব্যুনাল

সংবিধানের ১১৭ ধারা অনুসারে এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা প্রসাশনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। সরকারি এবং আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকুরি সংক্রান্ত জটিলতায় এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়, এরপর আপীল করতে হয় এডমিনিস্ট্রেটিভ আপিলেট ট্রাইব্যুনালে। এই এডমিনিস্ট্রেটিভ আপিলেট ট্রাইব্যুনালকে হাইকোর্টের সমান মর্যাদা দেয়া হয়। কাজেই এর বিরুদ্ধে আপীল করতে হলে হাইকোর্টে নয়, আপীল বিভাগে আপীল করতে হয়।

আপীল করা
সংবিধানের ১০৩ ধারা অনুসারে আপীল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ থাকে। হাইকোর্টে মামলা শেষ হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আপীলের আবেদন করা যায়। আপীল বিভাগ মামলটিকে আপীল করার যোগ্য মনে করলে আমলে নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। আবার কোন মামলা চলাকালে যদি হাইকোর্ট মনে করে মামলাটিতে সংবিধানের ব্যাখ্যার বিষয়টি জড়িত, তবে হাইকোর্ট বিভাগও মামলাটিকে আপীল বিভাগে পাঠাতে পারে।

লিভ টু আপিল
হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রায়ে যদি আপীল করা না করা প্রসঙ্গে কিছু উল্লেখ না থাকে, তবে প্রথমে আপীল বিভাগে আপীলের আবেদন করতে হয়। এই আবেদনকেই লিভ টু আপিল বলে। আবেদনকারী কি যুক্তিতে আপীল করতে চাইছে এসময় সেটা তুলে ধরতে হয়। আপীল বিভাগ আপীলের যোগ্য মনে করলে নিয়মিত মামলা হিসেবে সেটিকে গ্রহণ করে।

জামিন এবং আগাম জামিন
যদি কোন মামলায় নিম্ন আদালত জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে উচ্চ আদালত জামিন আবেদন বিবেচনা করে জামিনের নির্দেশ দিতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মামলাটি নিম্ন আদালতে চলতে থাকে, যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনে বেরিয়ে আসার সুযোগ পান।

সাধারণত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আগাম জামিনের সুবিধা পান। যদি কেউ আশংকা করে যে তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হতে পারে, তবে তিনি আগেভাগেই হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন।

হাইকোর্ট গুরুত্ব বুঝে আগাম জামিনের নির্দেশ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা গেলেও ঐ মামলায় তাকে গ্রেফতার করা যায় না।

কারা মামলা করতে পারেন
অন্য সব আদালতের মত উচ্চ আদালতেও নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে আইনজীবির সাহায্য নেয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে আইনগত দিক বুঝে আত্মপক্ষ সমর্থন বা নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে আইনজীবির সাহায্য নেয়া ভালো। যেসব আইনজীবি উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন, কেবল তারাই উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারেন। কাজেই নিম্ন আদালতে নিয়মিত মামলা পরিচালনা করছেন কিন্তু উচ্চ আদালতে তালিকাভুক্ত নন এমন আইনজীবি মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।

আইনজীবির সাথে যোগাযোগ।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবি নিম্ন আদালতে মামলা শেষ হওয়ার পর উচ্চ আদালতে মামলার জন্য কোন আইনজীবির কাজে যেতে হবে সে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে যেকোন আইনজীবির কাছেই যাওয়া যেতে পারে। তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ আইনজীবির হাতে ফল ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অভিজ্ঞ এবং সুপরিচিত আইনজীবি ছাড়া যে মামলা জেতা যাবে না, তা কিন্তু নয়। তুলনামূলকভাবে নবীন কিন্তু দক্ষ আইনজীবিও কম খরচে মামলা জিতিয়ে দিতে পারেন।

বিভিন্ন আইনজীবি বিভিন্ন ধরনের মামলা পরিচালনা করতে অভ্যস্ত, কাজেই বিষয়টি জেনে আইনজীবি বাছাই করা ভালো। আর পরিচিতদের মাধ্যমেও আইনজীবিদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা যেতে পারে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ল’ফার্মগুলোর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। আবার ব্যক্তিগতভাবেও কাউকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।

হাইকোর্ট চত্বরে অবস্থিত সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ভবনে বিভিন্ন আইনজীবির চেম্বার রয়েছে, এছাড়া এ ভবনের দু’টি হলে আইনজীবিগণ বসেন। সুপ্রীম কোর্ট বার অফিস থেকে তালিকাভুক্ত সব আইনজীবির ঠিকানা ও ফোন নম্বর সম্বলিত একটি ডিরেক্টরী সংগ্রহ করা যেতে পারে। এটি প্রতিবছর আপডেট করা হয়।

মামলার দায়িত্ব দেয়া।
ওকলাতনামা বা একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষরের মাধ্যমে আইনজীবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার দায়িত্ব দিতে হয়। একবার আইনজীবিকে দায়িত্ব দেবার পর তার লিখিত সম্মতি ছাড়া অন্য কোন আইনজীবির মাধ্যমে মামলা পরিচালনার সুযোগ থাকে না।

উকিল নোটিশ
যে কোন মামলা শুরু করার আগে প্রতিপক্ষকে নোটিশ দেওয়া।উচ্চ আদালতে মামলা করার বিভিন্ন তথ্য।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রীম কোর্টই হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। সু্প্রীম কোর্টের দু’টি বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগ। এই হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগ দু’টো একই এলাকায় অবস্থিত। মানুষের মুখে মুখে যা হাইকোর্ট নামে পরিচিত।

মামলা
উচ্চ আদালতে বিভিন্নভাবে মামলা হতে পারে। নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শেষ… হওয়ার পর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল হতে পারে, মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে আসতে পারে, আবার নিম্ন আদালতে চলমান বিচার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে হাইকোর্ট কোন নির্দিষ্ট মামলার ব্যাপারে নিম্ন আদালতকে নির্দেশনা দেয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মামলাটিকে উচ্চ আদালতে নিয়ে আসে।

কিছু কিছু মামলা আছে যেগুলোতে সরাসরি হাইকোর্টে যেতে হয়, যেমন: রিট, কোম্পানী সংক্রান্ত মামলা, খ্রিস্টান বিবাহ সংক্রান্ত মামলা, এডমিরালটি বা সমুদ্রগামী জাহাজ সংক্রান্ত মামলা।


মামলার দায়িত্ব দেয়াঃ

ওকালতনামা বা একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইনজীবিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার দায়িত্ব দিতে হয়। একবার আইনজীবিকে দায়িত্ব দেবার পর তার লিখিত সম্মতি ছাড়া অন্য কোন আইনজীবির মাধ্যমে মামলা পরিচালনার সুযোগ থাকে না।

উকিল নোটিশ

যে কোন মামলা শুরু করার আগে প্রতিপক্ষকে নোটিশ দেওয়া উচিত।

Comments